ভারতবর্ষের কৃষকদের সামাজিক দুর্বলতার পরিস্থিতি থেকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। বরাবরই মানুষকে অন্ন দানকারী এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলি সামাজিক দিক থেকে পিছিয়েই থেকেছেন।
তাই এই দেশে চাষীদের সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে শস্য বীমা থেকে শুরু করে একাধিক প্রকল্প রয়েছে। তবে বর্তমানে কৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রকল্পগুলিকে একটি ছাতার তলায় নিয়ে আসতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আসলে সঠিক উপভোক্তাদের কাছে সঠিক সুবিধা গুলি পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এমন ব্যবস্থা।
সম্প্রতি কৃষি ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে আসার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল ভাবে ফরমার আইডি কার্ড তৈরি করার একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তাই দেশের কৃষকরা এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে কোন কোন সুবিধা পাবেন? এখানে কিভাবে আবেদন জানাবেন? তা জানান সকল বিবরণ রইল আজকের প্রতিবেদনে।
ফার্মার আইডি কার্ডের সুযোগ সুবিধা
১) কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি ক্ষেত্রে চালু থাকা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প গুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
২) এক্ষেত্রে কৃষকেরা ন্যূনতম শস্য মূল্য, কৃষি ঋণ, ফসল বীমা, কৃষক ক্রেডিট কার্ড এমনকি প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা গুলিও এই কার্ডের দ্বারা উপভোগ করতে পারবেন।
৩) একটি কৃষক আইডি কার্ড থাকলে বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন জানানোর জন্য আলাদা করে নথিপত্র প্রদান করার প্রয়োজন হবে না।
৪) কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান অনলাইন মাধ্যমেই হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
৫) ভবিষ্যতে কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গবেষণা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সরকারকে সুবিধা প্রদান করবে এই আইডি কার্ডের তথ্য।
৬) সরকারি বাজার (eNAM)-এ সরাসরি ফসল বিক্রি করার সুবিধা পাবেন কৃষকরা।
কেন ফার্মার আইডি কার্ড বানাবেন?
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মূলত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতি আটকানোর জন্য প্রকল্পগুলিকে ডিজিটালীকরণ করে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সঠিক উপভোক্তার কাছেই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা যাবে বলে আশা করছেন সরকার।
তাছাড়া ফার্মার আইডি কার্ড তৈরি হলে একটি কেন্দ্রীভূত ডাটাবেসে একত্রিত ভাবে থাকবে কৃষকদের সমস্ত তথ্য। এর ফলে সরকার যেমন দ্রুততর উপায়ে তথ্য যাচাই করতে পারবে, তেমনি কৃষকেরাও সহজেই বিভিন্ন সুবিধায় লাভ করতে পারবেন।
লক্ষ্যমাত্রা
সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যেই দেশের ১১ কোটি যোগ্য কৃষককে ডিজিটাল সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কৃষককে একটি ইউনিক নম্বর যুক্ত কৃষক কার্ড প্রদান করা হবে। প্রতিটি কার্ড উপভোক্তার আধার নম্বর, জমির রেকর্ড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করবে।
কৃষক আইডি কার্ড যাতে দ্রুততর পদ্ধতির সাহায্যে দেশের কোনায় কোনায় থাকা কৃষকদের সংযুক্ত করতে পারে, তার জন্য বিশেষ শিবিরের আয়োজন করতে চলেছে সরকার। এই বিষয়ে রাজ্য সরকার গুলিকে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে এই শিবির চালানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অগ্রিম ১৫,০০০/- টাকা অনুদান দেওয়া হবে। এই টাকা প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের বাজেট থেকেই ধার্য করবে কেন্দ্র।
কোথায় কোথায় এই প্রকল্পটি চালু হয়েছে?
এখনো পর্যন্ত জানা তথ্য অনুসারে, ভারতবর্ষের গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র রাজ্যে এই প্রকল্পটি শুরু করে দেওয়া হয়েছে। তবে আসাম, ছত্রিশগড় এবং উড়িষ্যা রাজ্যেও কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে এই প্রকল্পের শিবির।
দুর্দান্ত এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারতবর্ষ এগিয়ে যেতে চলেছে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থার দিকে। এটি কৃষকদের পরিচয় পত্র হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হবে, তেমনি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে একাধিক সুযোগ-সুবিধা অর্জনের ক্ষেত্রেও কৃষকদের সহায়তা করবে। মূলত কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে ফার্মার আইডি কার্ড।