যেকোন ব্যাঙ্কের CSP কিভাবে নেবেন? ইনভেস্ট, ইনকাম? ডকুমেন্ট কি লাগে? সম্পূর্ণ তথ্য!

আজ-কালকার দিনে চাকরির যা অবস্থা! চারিদিকে হাহাকার, দুর্নীতিতে ভরে গেছে। এমত অবস্থায় অনেক বেকার ছেলেমেয়েরা নিজের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন। কিন্তু এত মুলধন কোথায় পাবে? তাই এমন ব্যবসা (Business) শুরু করতে হবে, যেখানে কম মুলধন প্রয়োজন এবং একটা স্থিতিশীল আয় করা যায়।
এমন একটি ব্যবসা হল- যেকোন নামী ব্যাঙ্কের Customer Service Point (CSP) নেওয়া। এতে খরচা অনেক কম, One Time Invest করতে হয়, এবং ইনকাম হবে লাইফটাইম। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের ভর্তুকি যুক্ত ঋণের (Government Loan) ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে থেকে নুন্যতম সুদের হারে ঋণ (Loan) নিয়ে আপনি নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
Customer Service Point (CSP) কি? কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন? কিভাবে গ্রাহক সেবা কেন্দ্র বা CSP নেবেন? কত টাকা ইনভেস্ট করতে হবে? মাসিক আয় কেমন হবে? কি কি কাজ করতে হবে? গ্রাহকদের কি কি পরিষেবা দিতে পারবেন? এই সমস্ত তথ্য বিস্তারিত জানুন আজকের এই প্রতিবেদনে।
Customer Service Point (CSP) কি?
প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় অনেক সময় ব্যাঙ্ক তার পরিষেবা, সাধারন মানুষজনদের দিতে পারে না। তাই ব্যাঙ্ক স্বতন্ত্র কাউকে তাদের ব্যাঙ্কের হয়ে সমস্ত কাজ করার অধিকার দেয়। এই পরিষেবা দেবার জন্য ব্যাঙ্ক কমিশন হিসেবে বেতন দিয়ে থাকে। যেকেউ নুন্যতম যোগ্যতা থাকলে এই CSP সেন্টার নেবার জন্য আবেদন করতে পারে।
কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন?
প্রথমে, আপনার ইচ্ছানুসার ব্যাঙ্কের CSP Id নিতে হবে। তারপরে, কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম কিনতে হবে। যেমন- পাশবই প্রিন্টার, টাকা গোনার মেশিন, কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ, ইন্টারনেট (Wifi) ও বৈদ্যুতিক (Electricity) কানেকশন, সিসিটিভি ও একটি লকার। এই সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে যেকোন বাজার এলাকায়, যেখানে ফুটফল বেশি CSP সেন্টার খোলার জন্য একটি দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে বসে পড়ুন। দোকানে বাইরে CSP সেন্টারের একটি ব্যানার টানিয়ে নেবেন।
কত টাকা ইনভেস্ট করতে হবে?
CSP Id নিতে গেলে কিছু টাকা ফি জমা দিতে হয়। এছাড়া, বাকি যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম কিনতে গেলেও কিছু টাকা-পয়সা লাগবে। আনুমানিক সবমিলিয়ে ১.৫ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনভেস্ট (Investment) করতে হবে। যেটা আপনি সরকারি ঋণে পেয়ে যাবেন।
CSP নিতে গেলে কি যোগ্যতা লাগবে?
শিক্ষাগত যোগ্যতা
ভারতবর্ষের যেকোন নাগরিক এখানে আবেদন করতে পারবেন। যেকোন বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে নুন্যতম মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক পাশ করে থাকলেই আবেদনযোগ্য।
বয়স
আবেদনকারী প্রার্থীর নুন্যতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে, সর্বচ্চ ৫০ বছরের মধ্যে বয়স থাকা চাই। পুরুষ/মহিলা সবাই আবেদন করতে পারবেন। নিজের এলাকা অথবা যেখানে এখনও কোন ব্যাঙ্কের CSP নেওয়া হয়নি, সেখানে এই সেন্টার করতে পারেন।
কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?
- আধার কার্ডের জেরক্স,
- ভোটার কার্ডের জেরক্স,
- প্যান কার্ডের জেরক্স,
- পুলিশ ভেরিফিকেশন শংসাপত্র,
- সমস্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার শংসাপত্র ও মার্কশিট,
- দোকানের মালিকানা থাকলে দলিল অথবা ভাড়া নেবার প্রমানপত্র।
গ্রাহকদের কি কি পরিষেবা দিতে পারবেন?
একটি ব্যাঙ্কের যা কাজ হয় আপনি সেই একই কাজ এখানে করতে পারবেন। যেমন, পাশবই আপডেট, ক্যাশ জমা (Cash Deposit), টাকা তোলা (Cash Withdraw), নতুন ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা, ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposit), চেক জমা করা, ATM কার্ডের আবেদন ইত্যাদি। তবে টাকা তোলার লিমিট বেধে দেওয়া আছে। যেমন একজন ব্যাক্তি, একদিনে সর্বচ্চ ২৫,০০০/- পর্যন্ত টাকা তুলতে পারবেন। আধার নম্বর এবং হাতের আঙ্গুলের ছাপের সাহায্যে CSP থেকে টাকা তোলা যায়।
মাসিক আয় কেমন হবে?
CSP নিলে ব্যাঙ্ক আপনাকে ফিক্সড কোনো মাইনে দেবে না। আপনি একদিনে যা কাজ করবেন, তার উপরে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাবেন। এটাই আপনার ইনকাম। যেমন, আপনি কোন গ্রাহকের ক্যাশ জমা করলেন অথবা ক্যাশ তুলে দিলেন। এই ট্রাঞ্জাকশনের উপর আপনি ধরুন ১% কমিশন পেলেন। এইভাবে প্রতিদিন যা ট্রাঞ্জাকশন (Transaction) করবেন, মাসের শেষে তাই আপনার ইনকাম। আপনার CSP সেন্টারে ভালো কাস্টমার হলে, আনুমানিক প্রতিমাসে ৩০,০০০/- টাকা কম করে আয় হবে।
কিভাবে গ্রাহক সেবা কেন্দ্র বা CSP নেবেন?
প্রথমেই বলে রাখি ব্যাঙ্ক সরাসরি কাউকে CSP দেয় না। অর্থাৎ, আপনি যদি মনে করেন, ব্যাঙ্কে গিয়ে সরাসরি CSP এর জন্য আবেদন করবেন, তা পারবেন না। এরজন্য প্রতিটি ব্যাঙ্কের আলাদা করে থার্ড পার্টি এজেন্সি বা কোম্পানি আছে। CSP দেবার ব্যাপারটা তারা দেখে।
তাহলে এখন আপনাকে জানতে হবে কোন ব্যাঙ্কের CSP কোন কোম্পানি বা এজেন্সি দিয়ে থাকে। তা জানার জন্য আপনি ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা, যে অলরেডি CSP নিয়েছেম সেই Owner এর সাথে কথা বলে নেবেন। যেমন- স্টেট ব্যাঙ্কের CSP দিয়ে থাকে ZeroMass নামক একটি সংস্থা।
সতর্কবার্তা- বর্তমানে CSP Id দেবার নামে অনেকে স্ক্যাম বা ফ্রড করে। তাদের থেকে খুবই সাবধান। টাকা দেবার পূর্বে অবশ্যই কোম্পানির ব্রাঞ্চ ভিজিট করবেন। সমস্ত কিছু যাচাই করে নেবেন। এই প্রতিবেদনটি কোনরকম পেইড প্রমোশন নয়।
Buisness Loan
দেশের বেকার ছেলেমেয়েরা যাতে নিজের ব্যবসা করে স্বনির্ভর হতে পারে, সেই লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভর্তুকি যুক্ত লোন দিয়ে থাকে। এমন কিছু লোন প্রকল্প হল- Pradhan Mantri Mudra Yojana (PMMY)। এই লোন প্রকল্পে আপনি ৩টি ক্যাটাগরিতে লোন পেতে পারেন।
১/ শিশু ক্যাটাগরি: যেখানে সর্বচ্চ ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন।
২/ কিশোর ক্যাটাগরি: সর্বনিম্ন ৫০,০০০/- থেকে সর্বচ্চ ৫ লাখ টাকা।
৩/ তরুন ক্যাটাগরি: সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ঋণ পাবেন।